ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউপি’র রতনপুরের সন্তান ছিলেন স্যার কে. জি. এম ফারুকী (১৮৯১-১৯৮৪), যিনি বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে যথাক্রমে খান বাহাদুর (১৯২৪), নবাব (১৯৩২) ও নাইট (১৯৩৬) উপাধীতে ভূষিত হয়েছিলেন।
তিনি বৃটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, সমবায় ও গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পুরো নাম কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী।
তাঁর পৈতৃক ভিটে রতনপুরে গিয়ে তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে দেখা যায়, তেমন কেউ চিনেন না তাঁকে। পৈর্তৃক যে ভবনটি ছিল তাও আজ নেই। স্থানীয় বর্ষিয়ান, ইন্টারনেট ও ঢাকাস্থ রতনপুর পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত পূর্ণমিলনীর স্মরনিকা থেকে জানা যায়, তিনি একাধারে জমিদার, রাজনীতিবিদ ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক হানাফি’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
তিনি নিজেকে খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.) এঁর ১৮ তম পুরুষ কাজী উমর শাহ ফারুকীর বংশধর বলে দাবি করতেন।
কাজী উমর শাহ ফারুকী ছিলেন মুগল সম্রাট ফররুখ সিয়ারের অধীনে বাংলায় কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তাঁকে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার ২ টি পরগনা জায়গীর প্রদান করা হয়েছিল।
স্যার কে. জি. এম ফারুকী ১৯১৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ১৯১৭ সালে কুমিল্লা পৌরসভার কমিশনার হয়েছিলেন। প্রথম দিকে মধ্যম জাতীয়তাবাদী, মুসলিম লীগ ও পরে ১৯৩৭ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন তৎকালীন ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যানও।
জানা যায়, তৎকালীন বাংলা সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি। পরে তিনি তাঁকে চিফ হুইপ পদে মনোনীত করেছিলেন।
স্যার কে. জি. এম ফারুকী ১৯২১ সালে ব্রিটিশ যুবরাজ অষ্টম এডওয়ার্ড কলকাতা সফরে এলে তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য যে ৮৮ সদস্যের অভ্যর্থনা কমিটি ছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
তিনি কুমিল্লা শহর বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা, চকবাজার পানির ট্যাংক স্থাপন, দেবিদ্বার উপজেলায় তার পিতার নামে দেবিদ্বার কাজী রিয়াজ উদ্দিন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন, দাদা আফতাব উদ্দিনের নামে আফতাবিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা-প্রতিষ্ঠান স্থাপন, সংস্কারসহ নানা জনহিতকর কাজে ভূমিকা রেখে গেছেন। নিজের জমিদারির জমি-জমা ও নগদ অর্থ করে গেছেন দান।
জানা যায়, দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাস্থ ‘নবাব অব রতনপুর ভবন’ এ ১৯৮৪ সালে ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নিজেকে রতনপুরের নবাব হিসেবে আজীবন ধারন করলেও রতনপুরে নেই কোন তাঁর স্মৃতি চিহ্ন। ধ্বংসাবশেষ পরিত্যক্ত দালান বাড়িটিও আজ আর নেই।