শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

স্মৃতি কথা

ইলিয়াস আহমেদ / ৬৯ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

বিগত বেশ কিছুদিন যাবত স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাল্য স্মৃতি নিয়ে কিছু একটা লিখার জন্য।

আজ কিছুটা মনের খোড়াক সংগ্রহ করে বাল্য স্মৃতির কাল্পনিক খেলার মাঠ, মেলা ও সাপ্তাহিক হাট নিয়ে লেখা শুরু করলাম।

এখানে বলে রাখা ভালো পুরো লিখাটা প্রাণের নবীনগর তিতাস পাড়ের স্মৃতি ও তিতাস বিধৌত পার্শ্ববর্তী এলাকাকে নিয়ে।

আমার বিশ্বাস নতুন প্রজন্ম এই লেখা থেকে কিছু জানতে পারবে।
খেলার মাঠ: নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, কনিকাড়া মাঠ, নারায়নপুর মাঠ, ইব্রাহিমপুর মাঠ, লাউর ফতেহপুর মাঠ, কালগড়া মাঠ, রসুল্লাবাদ মাঠ, কৃষ্ণনগর হাই স্কুল মাঠসহ আরও অনেক মাঠে অনুষ্ঠিত হতো ফুটবল টুর্নামেন্ট। তখন ফুটবল খেলাই বেশি জনপ্রিয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের ক্লাব থেকে নামি-দামি খেলোয়াড় সংগ্রহ করে এলাকার সনামধন্য খেলোয়াড়দের নিয়ে ঘটিত হতো এক একটি দল। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শকে কানায় কানায় ভরে যেতো মাঠ। সমর্থক ও দর্শকদের মাঝে বিরাজ করতো উৎসব মুখর পরিবেশ। সে সব টুর্নামেন্টে দূরন্ত বন্ধুদের নিয়ে উপস্থিত হওয়া ছিলো আমাদের নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়।

কতো না ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, খাল-বিল, নদী-নালা পেরিয়ে যাওয়া-আসা করেছি, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই।

নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আন্ত:বিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো মাসব্যাপী। মনে পড়ে, সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত সতীশ ঘোষ কাকা, প্রয়াত আবদুল আহাদ চেয়ারম্যান কাকা, বিদ্যালয়ের গেম টিচার স্যারের কথা, যারা খেলার রেফারির দায়িত্ব পালন করতেন। আরও মনে পড়ে, সেই স্বনামধন্য খেলোয়াড়দের কথা। যাদের অনেকই আজ আমাদের মাঝে নেই, রেখে গেছেন অসংখ্য স্মৃতি। যারা আছেন তাঁদের কেউ কেউ প্রবাসে আছেন, আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় আছেন। কদাচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে ফিরে যাই সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোতে।

ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রসঙ্গে একটি কথা প্রায়শই মনে পড়ে, বাল্যকালে বাবা দোকানে (মোসলেম লাইব্রেরী) বসে বাবার বন্ধু আড্ডায়, এলাকার স্বনামধন্য ব্যাক্তিদের শুনতাম, কোনো এক সময় নবীনগর হাই স্কুল মাঠে টিনের বেড়া দিয়ে, টিকেটের বিনিময়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো।

টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতো স্থানীয় দলসহ ঢাকা থেকে আসা চিত্তরঞ্জন কটন মিল টিম, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবসহ আরও নামি-দামি ফুটবল টিম। এই টুর্নামেন্টের নেতৃত্ব দিতেন প্রয়াত মদন মিয়া সাহেবসহ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। একদিন বাবার দোকানে কিছু একটা খুঁজতে যেয়ে পেয়ে গেলাম একটা বাক্স, যার মাঝে ছিল সাদা, হলুদ ও গোলাপি রঙের টিকেট, বাবাকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম, সেই টিকেটগুলো ফুটবল টুর্নামেন্টের।
মেলা: প্রসিদ্ধ ভোলাচং এর ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা, আমাবস্যায় ভোলাচং ও শ্রীরামপুর কালি মেলা, নবীনগর পঞ্চবটী মেলা, নবীনগর জেলেপাড়া মেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর মেলা, নারায়নপুর হাসান শাহ”র উরস মেলা, নবীনগর করিম শাহ উরস মেলা, নবীনগর শাহ সাব বাড়ি উরস মেলাসহ পার্শ্ববর্তী আরও অনেক মেলায় সবান্ধব উপস্থিতি ছিলো বাল্য জীবনের আরেকটি দুরন্তপণার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

যার যার সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা, যার মাঝে থাকতো একটা প্রতিযোগিতা। কে ভালো ও আনকমন খেলনা বা জিনিস কিনেছে, সেটাই ছিলো প্রতিযোগিতা। রং বেরং এর শরবত সহ নানান রকমের খাবার খাওয়া। কোনো কিছুতে দুরন্তপণার সামান্য কমতি ছিলো না।

সাপ্তাহিক হাট: সাপ্তাহিক হাট ছিলো সর্বসাধারণের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত একটি দিন। প্রয়োজনীয় নিত্য পণ্য ক্রয় করা, বিয়ে-শাদির বাজার ও আচার অনুষ্ঠানের কেনাকাটার জন্য একটি হাটবার ছিলো পুর্ব পরিকল্পনা ও প্রতীক্ষার। দলবেঁধে কে কি ভাবে আসবে তার ছিলো পুর্ব পরিকল্পনা। বিষয় করে বর্ষাকালে। নবীনগর বাজার, ভোলাচং পুরাতন বাজার, শ্রীঘর বাজার, রামচন্দ্র পুর বাজার সমুহের হাটবার ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাবার শ্রীঘর বাজারে যাওয়া হতো প্রায় হাটে এবং রামচন্দ্র পুর হাটে গিয়েছিলাম মামাদের সাথে। যোগাযোগ ব্যাবস্থা বলতে ছিলো বর্ষাকালে নৌকা ও শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নতি হওয়ায় সিএনজি, অটোরিকশায় সর্বত্র যাতায়াত করা যায়। যে কারণে হাটের গুরুত্বও তেমন একটা নেই। এখন সব গ্রামে বাজার এবং গ্রামের আনাচে কানাচে দোকান। আমার দেখা মতে, নবীনগর বাজার এখন প্রতিদিনই হাটবার।
খেলার মাঠ, মেলা, উরস মেলা ও হাটে যেসব দোকান ছিলো, তার মাঝে সবচেয়ে বেশি মনকাড়ে, নবীনগর বাজারে হরিদাস চন্দ্র সাহা (গান্ধী) কাকার দোকানে বাদাম বুট ভাজা, মুড়ি ও চিঁড়ার মোয়া। মালি সাহা কাকার ডাইলের বড়া ও গুলগুলা। জল্লা গ্রামের মস্তু মিয়ার নিজের হাতে তৈরী করা চানাচুর, বিভিন্ন নামকরা দোকানে জিলাপি, আমিত্তি, মুরালীসহ নানান পদের খাবার। আরও মনে পড়ে, মৌসুমি ফলসহ সবজির কথা।

এখানে উল্লেখ করতে হয়, হাটবাজার, মেলা, উরস, মেলা ও খেলার মাঠে আমার বাবার সোডা লেমনেড এর দোকান থাকতো, যা পরিচালনা করতেন প্রয়াত নিশিকান্ত কাকা, আজগর আলী কাকা ও নায়েব আলী কাকা।

আজকের পোস্টে কাল্পনিক ছবি সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন ছোট ভাই প্রবাল আহমেদ।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ